সাপ্তাহিক ছুটি রবিবারেই কেন থাকে, অন্য দিন কেন নয়? কারণ জানলে অবাক হবেন
একটি রবিবারের অবসান। অপেক্ষা, আসন্ন এক রবিবারের। মাঝের বাকি দিনগুলো অর্থাৎ সোম থেকে শনি প্রত্যেকেই চাতক পাখির মতো চেয়ে বসে থাকে সপ্তাহান্তের এই দিনটির অপেক্ষায়, কবে আসবে ছুটির দিন রবিবার? কারণ, সানডে মানেই, 'ফান ডে', সবকিছুর থেকে ছুটি। পুরো সপ্তাহের ক্লান্তি দূর করার এটিই একমাত্র দিন। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব থেকে নিজেকে সময় দেওয়ার সেরা ছুটির দিন। ছুটির আমেজকে সঙ্গে নিয়ে মজা, ঘুরতে যাওয়া আড্ডা, জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া আর গল্প লেগেই থাকে সারাটা দিন।
বসের বকবক নেই, নেই কোনও কাজের চাপ, ঘড়ি ধরে সময় নির্ধারণ করার চাপও নেই, আছে শুধু নিজের ভালোলাগা, স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বাধীনতা প্রকাশের কিছু মুহূর্ত। আর এই সামান্য মুহূর্তকে ফিরে পেতে আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি সপ্তাহের এই বিশেষ দিনটির জন্য। বিভিন্ন পরিকল্পনার পাশাপাশি খাওয়া, ঘুম আর আলসেমিতেও দিন কাটে অনেকের। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন, ছুটির দিন হিসেবে কেনই বা আমরা রবিবারের অপেক্ষা করি? সপ্তাহের বাকি দিন বাদ দিয়ে রবিবারকেই কেন ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হল? ভাবেননি তো? তবে চলুন আজ জেনে নিন সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে রবিবারকে কেনো বেছে নেওয়া হয়েছিল। এর পেছনের ইতিহাসটি আসলে কী তা দেখে নিন।
ছুটির দিন 'রবিবার'। এর পিছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ও ইতিহাস জড়িত রয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে রবিবারের উৎপত্তি হয় ব্রিটিশ শাসন কাল থেকেই। কিন্তু খুব সহজেই ছুটির এই দিনটি অর্জিত হয়নি। বহু আন্দোলন ও আলোচনার পর এটি অর্জিত হয়।
ইতিহাস
ইতিহাস অনুযায়ী, ব্রিটিশ শাসনকালে শ্রমিকদের কারখানায় সপ্তাহের ৭ দিনই কাজ করতে হতো। শ্রমিকদের জন্য ছুটির দিন হিসেবে আলাদাভাবে কোনও দিন ধার্য করা ছিল না। কেবলমাত্র ব্রিটিশ অফিসাররাই সপ্তাহের একটা দিন অর্থাৎ রবিবার ছুটি পেতেন। কারণ, এই রবিবার তাঁরা গির্জায় যেতেন প্রার্থনার জন্য। দিনের পর দিন এভাবে কোন ছুটি ছাড়া কাজ করা শ্রমিকদের পক্ষে কঠিন হয়ে উঠছিল। শ্রমিকদের এই কষ্টের কথা অনুভব করে, সে সময় শ্রমিক নেতা শ্রীনারায়ণ মেঘাজি লোখান্ডে ব্রিটিশ সাহেবদের কাছে একটি দিনের ছুটির আর্জি জানান। তিনি কর্মকর্তাদের বলেন, শ্রমিকদের সপ্তাহে একটা দিন ছুটি দেওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, রবিবার হিন্দু দেবতা ' খান্ডোবা ' এর দিন, যে কারণে ব্রিটিশদের মতোই ভারতীয় শ্রমিকদের প্রার্থনার জন্য রবিবার ছুটি দেওয়া প্রয়োজন।
মেঘাজি লোখান্ডের এই প্রস্তাব খারিজ করে দেয় ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু লোখান্ডে হার মানেননি। শ্রমিকদের জন্য লড়ে গেছেন তিনি। দাবি আদায়ের জন্য ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সাত বছর ধরে লড়াই চালিয়ে গেছেন শ্রমিকদের নিয়ে। দীর্ঘ সাত বছর লড়াইয়ের পর হার মানে ব্রিটিশ সরকার। অবশেষে ১৮৯০ সালের ১০ জুন রবিবার, লোখান্ডের দাবি মেনে ভারতীয় শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ছুটির দিন হিসেবে রবিবারকে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকেই শুরু সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার।
শ্রীনারায়ন মেঘাজি লোখান্ডের হাত ধরে শ্রমিকদের জীবনে ফিরে আসে নতুন আশার আলো। তবে শুধু ছুটির দিন ধার্য করা নয়, তাঁর হাত ধরে কাজের মাঝে আধঘন্টা খাওয়ার সময় এবং প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে মাইনে দেওয়ার ব্যবস্থাও চালু হয়েছিল। তবে প্রথম দিকে ব্রিটিশ সরকার সপ্তাহে একদিনের ছুটির টাকা অর্থাৎ মাসের চার দিনের টাকা কাজ ছাড়া কর্মীদের দিতে রাজি হননি, কিন্তু পরে তা দিতে রাজি হয়ে যান।
লোখান্ডের এই ভূমিকা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা। পরবর্তীকালে লোখান্ডে ভারতের প্রথম শ্রমিক সংগঠন বম্বে মিল হ্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন চালু করেন। আজ এই মানুষটির জন্যই আমরা ছুটির দিন হিসেবে রবিবারকে পালন করে থাকি। ব্রিটিশদের থেকে আদায় করে নেওয়া সাপ্তাহিক ছুটি আজও ভারতে অপরিবর্তিত।
source : OIBN
Post a Comment